কারো স্ট্রোক হয়েছে এমন কথা শুনলেই আমরা আতকে উঠি। অনেকেই মনে করেন স্ট্রোক মানেই অবধারিত মৃত্যু। কিন্তু আসলে কি তাই?
আমাদের সকলের স্ট্রোক বিষয়ে ধারনা থাকা একান্ত জরুরী।
যদি কারো মস্তিষ্কে রক্ত সরাবরাহ ঠিক মত না হয় তাহলে সেই স্থানের কোষ নষ্ট হয়ে যায়। তখন সে স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়।
স্ট্রোক প্রতিরোধ করার জন্য প্রথমে জানা প্রযোজন এই সমস্যাটি কেন হয়। এই সমস্যার সম্ভাব্য কারণ সমূহ নিম্নরূপ।
- রক্তে কোলেস্টেরলের পরিমাণ অধিক হলে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
- উচ্চ রক্তচাপের কারণে মস্তিষ্কে রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর ফলে স্ট্রোক হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয়।
- অতিরিক্ত মানসিক চাপ, হতাশার মধ্যে থাকলেও এই সমস্যা দেখা দিতে পারে।
- দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা, কায়িক পরিশ্রম কম করা স্ট্রোকের অন্যতম কারণ।
- অতিরিক্ত তেলে ভাজা খাবার, ফাস্ট ফুড, কমল পানীয় ইত্যাদি স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়।
- ধূমপান ও মদ্যপানের ফলে অন্যান্য অনেক অসুখের সঙ্গে সঙ্গে স্ট্রোকের ঝুকিও অনেকটাই বেড়ে যায়।
- ডায়াবেটিক রোগীদের অনিয়ন্ত্রিত খাবার গ্রহন এবং নিয়মিত ব্যায়াম না করা তাদের স্ট্রোকের অন্যতম কারণ।
- হার্টের সমস্যা থাকলেও ব্রেন স্ট্রোকের ঝুঁকি বেড়ে যেতে পারে।
স্ট্রোকের লক্ষণ সমূহ জানেন কি? আসুন আমরা এই সমস্যাটির সম্ভাব্য লক্ষণ সমূহ জেনে নেই।
মুখের অর্ধেক অসাড় হয়ে পড়াঃ
আপনি যদি হঠাৎ করেই কথা বলতে যেয়ে বা হাসতে যেয়ে মুখের অর্ধেক নাড়াতে না পারেন বা মুখের অর্ধেক পুরোপুরি অসাড় হয়ে পড়ে তাহলে বুঝতে হবে আপনার স্ট্রোক হয়েছে।
একটি হাতে দুর্বলতা অনুভব করাঃ
স্ট্রোকের আরেকটি স্পষ্ট লক্ষণ হলো কোনো একটি হাতে এমন দুর্বলতা বা অসাড়তা অনুভব করা যে আপনি তা মাথার ওপর টেনে তুলতে পারছেন না।
কথা জড়িয়ে যাওয়াঃ
স্ট্রোকের অন্যতম লক্ষণ হল কথা জড়িয়ে যাওয়া বা কথা বলতে অসুবিধা হওয়া। এই সমস্যায় আক্রান্ত হলে ব্যক্তি কথা বলার সময় অস্পষ্ট আওয়াজ করতে থাকেন।
শরীরের একপাশে দুর্বলতা বা প্যারালাইসিসঃ
স্ট্রোক হলে শরীরের কিছু অংশ বা অর্ধেকটায় দুর্বলতা বা প্যারালাইসিস দেখা দিতে পারে।
ঝাপসা দৃষ্টিঃ
স্ট্রোকের আরেকটি লক্ষণ হলো কোনো একটি চোখের দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসা।
তীব্র মাথাব্যথাঃ
যেকোনো সময়ের মাথা ব্যথার তুলনায় স্ট্রোকের কারণে মাথা ব্যথা অনেক বেশি তীব্র হয়।
স্ট্রোকের ঝুঁকি এড়াতে আমাদের অবশ্যই কিছু বিষয় খেয়াল রাখতে হবে।
- দৈনন্দিন খাবার তালিকায় পর্যাপ্ত পরিমাণে শাকসবজি ও ফলমূল রাখতে হবে। যতটা সম্ভব সুষম খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
- প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট হাঁটার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে।
- ধূমপান, মদ্যপান, মাদক দ্রব্য, তামাক পাতা ও জর্দ্দা খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
- প্রতিদিন অন্তত ৬-৮ ঘণ্টা ঘুমোতে হবে। এর কম হলেই বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিবে।
- উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিক রোগীদেরকে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী নিয়মিত ঔষধ খেতে হবে।
- শরীরের ওজন অবশ্যই নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। অধিক ওজন স্ট্রোকের ঝুঁকি বাড়ায়।
একটু সচেতন হলেই আমরা স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে পারি। তাই স্ট্রোকের ঝুঁকি কমাতে নিজে সচেতন হন এবং অন্যকেও সচেতন করুন।