➤ রক্ত(Blood) কি.......?
☞ রক্ত হচ্ছে মানুষের জীবন রক্ষাকারী এক বিশেষ তরল যোজক টিস্যু যার মাধ্যমে বিভিন্ন রক্তবাহিকা দেহের সকর কোষে পুষ্টি, ইলেক্ট্রোলাইট, হরমোন, ভিটামিন, অ্যান্টিবডি,অক্সিজেন, ইমিউন কোষ ইত্যাদি বহন করে এবং কার্বন-ডাই-অক্সাইড ও বর্জ্য পদার্থ প্রত্যাহৃত হয়। একজন পূর্ন বয়স্ক মানুষের শরীরে ৫-৬ লিটার রক্ত থাকে। রক্ত সামান্য ক্ষারীয়। এর pH মাত্রা ৭.৩৫-৭.৪৫। এর তাপমাত্রা ৩৬-৩৮° সেলসিয়াস। অজৈব লবণের উপস্থিতির জন্য রক্তের স্বাদ নোনতা।
➤ রক্তের উপাদান(Components of Blood) কি....?
☞ একটি টেস্টটিউবে রক্ত নিয়ে সেন্ট্রিফিউগাল যন্ত্রে ঘুরালে রক্ত দুটি স্তরে বিভক্ত হয়ে পড়ে। উপরের হালকা হলুদ বর্ণের যে অংশটি দেখা যায় সেটি রক্তরস(Plasma) এবং নিচের গাঢ়তর যে অংশটি দেখা যায় সেটি হলো রক্তকণিকা(Blood Corpuscles)।
☑ রক্তরস কি......?
☞ রক্তের হালকা হলুদ বর্ণের তরল অংশকে রক্তরস(Plasma) বলা হয়। রক্তরস তরল কঠিন পদার্থের সমন্বয়ে তৈরি। এতে তরল পদার্থের(পানির) পরিমাণ ৯০-৯২% এবং কঠিন পদার্থের পরিমাণ ৮-১০%।
▶রক্তরসের কাজ কি....?
১. রক্তের তরলতা রক্ষা করে এবং ভাসমান রক্ত কণিকাসহ অন্যান্য দ্রবীভূত হয়ে পদার্থ দেহের সর্বত্র পরিবাহিত হয়।
২. পরিপাকের পর খাদ্যসার রক্তরসে দ্রবীভুত হয়ে দেহের বিভিন্ন টিস্যু ও অঙ্গে বাহিত হয়।
৩. টিস্যু থেকে যে সব বর্জ্যপদার্থ বের হয় তা রেচনের জন্য বৃক্কে নিয়ে যায়।
৪. টিস্যুর অধিকাংশ কার্বন ডাই অক্সাইড রক্তরসে বাইকার্বনেটরুপে দ্রবীভূত থাকে।
৫. অল্প পরিমাণে অক্সিজেন বাহিত হয়।
৬. লোহিত কণিকায় সংবদ্ধ হওয়ার আগে অক্সিজেন প্রথমে রক্তরসেই দ্রবীভূত হয়।
৭. রক্তরসের মাধ্যমে হরমোন, এনজাইম, লিপিড প্রভৃতি বিভিন্ন অঙ্গে বাহিদ হয়।
৮. রক্তরস রক্তের অম্ল-ক্ষারের ভারসাম্য রক্ষা করে।
৯. রক্তর জমাট বাঁধার প্রয়োজনীয় উপাদান গুলো পরিবহন করে
১০. যকৃত, পেশি ইত্যাদি অঙ্গে উৎপন্ন তাপ শক্তিকে সমগ্র দেহে পরিবহন করে দেহে তাপের সমতা রক্ষা করে।
☑ রক্তকণিকা(Blood Courpuscles) কি.......?
☞ রক্তে ভাসমান বিভিন্ন কোষকে রক্ত কণিকা বলা হয়। এই কোষ গুলো হিমাটোপয়েসিস প্রক্রিয়ায় সৃষ্টি হয়। অন্যান্য কোষের মতো স্ববিভাজিত হয়ে সৃষ্টি হয় না বলে এদের কোষ না বলে কণিকা বলা হয়। রক্তের ৪৫% হরো রক্তকণিকা।
▶রক্ত কণিকা(Blood Courpuscles) কত প্রকার ও কি কি.....?
☞ রক্তকণিকা(Blood Courpuscles) তিন(৩) প্রকার যথাঃ
১. লোহিত রক্তকণিকা(Erythrocytes)
২. শ্বেত রক্তকণিকা (Leucocytes)
৩. অণুচক্রিকা (Platelets)
১. লোহিত রক্তকণিকা(Erythrocytes) কি....?
= > মানবদেহের রক্তরসে ভাসমান গোল, দ্বি-অবতল চাকতির মতো, নিউক্লিয়াসবিহীন কিন্তু অক্সিজেনবাহী হিমোগ্লোবিনযুক্ত, লাল বর্ণের কণিকাকে লোহিত রক্তকণিকা বলা হয়। এ ধরনের কণিকার গড় ব্যাস ৭.৩মিউম ও গড় স্থুলতা ২.২মিউম এবং এটির কিনারা অপেক্ষা মধ্যভাগ অনেক পাতলা।
▶লোহিত কণিকার কোথায় থেকে সৃষ্টি হয়......?
=>মানব ভ্রণের প্রাথমিক পর্যায়ে কুসুম থলিতে, মাধ্যমিক পর্যায়ে যকৃত এবং ভূমিষ্ঠ সময় থেকে পর্শুকা, কশেরুকা, স্টার্ণাম ও শ্রেণিচক্রের লাল অস্থিমজ্জায় অবস্থিত বড় নিউক্লিয়াসযুক্ত এরিথ্রোব্লাস্ট নামক স্টেমকোষ থেকে অবিরাম লোহিত কণিকা সৃষ্টি হয়।
▶ লোহিত কণিকার(Erythrocytes) কাজঃ
১. হিমোগ্লোবিনের মাধ্যমে ফুসফুস থেকে দেহকোষে অধিকাংশ অক্সিজেন ও সামান্য পরিমাণ কার্বন ডাই অক্সাইড সরবরাহ করে।
২. রক্তের ঘনত্ব ও আঠালো ভাব রক্ষা করে।
৩. হিমোগ্লোবিন বাফার হিসেবে রক্তে অম্ল-ক্ষারের সমতা রক্ষা করে এবং রক্তের সাধারণ ক্রিয়া বজায় রাখতে সাহায্য করে।
৪. রক্তের আয়নিক ভারসাম্য অব্যাহত রাখে।
৫. রক্তরসের স্থে অভিস্রবণিক সম্পর্ক রক্ষা করে।
৬. প্লাজমাঝিল্লিতে সংযুক্ত অ্যান্টিজেন রক্তের গ্রুপিংয়ে সাহায্য করে।
৭. এসব কণিকা রক্তে বিলিভার্ডিন ও বিলিরুবিন উৎপন্ন করে।
২. শ্বেত রক্তকণিকা (Leucocytes)
=> দেহকে জীবাণুঘটিত রোগ থেকে মুক্ত রাখতে যে রক্তকণিকা ইমিউন তন্ত্রের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে সদা তৎপর থাকে তা হাচ্ছে শ্বেত রক্তকণিকা। যেভাবে ও ডে পথে জীবাণুর অনুপ্রবেশ ঘটুক না কেন শ্বেত রক্তকণিকার দুটি বিশেষ প্রহরী B-লিস্ফোসাইট ও ফ্যাগোসাইট অত্যন্ত দক্ষতার সাথে সেগুলোর মোকাবিলা করে মানুষের জীবন রক্ষা করে।
▶ শ্বেত রক্তকণিকার(Leucocytes) কাজঃ
১. মনোসাইট ও নিউট্রোফিল ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় জীবাণু ভক্ষণ করে ধ্বংস করে।
২. লিস্ফোসাইটগুলো অ্যান্টিবডি সৃষ্টি করে রোগ প্রতিরোধ করে।
৩.বেসোফিল হেপারিন সৃষ্টি করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৪. দানাদার লিউকোসাইট হিস্টামিন সৃষ্টি করে দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়।
৫. নিউট্রোফিলের বিষাক্ত দানা জীবাণু ধ্বংস করে।
৬. ইওসিনোফিল রকাতে প্রবেশকৃত কৃমির লার্ভা এবং অ্যালার্জিক-অ্যান্টি ধ্বংস করে।
৩. অণুচক্রিকা (Platelets)
=> দেহের লাল অস্থিমজ্জা মেগাক্যারিওসাইট নামে বড় কোষ থেকে উৎপন্ন ও রক্তরসে ভাসমান ১-৪ মিউম ব্যাসসম্পন্ন, অনিয়তাকার, ঝিল্লি-আবৃত, সামান্য সাইটোপ্লাজমযুক্ত কিন্তু নিউক্লিয়াসবিহীন, কোষ-ভগ্নাংশকে অনুচক্রিকা বলে। প্রতি মিলি রক্তে প্রায় ১,৫০০০০-৩,০০০০০ অনুচক্রিকা থাকতে পারে। প্রতিদিন প্রায় ২০০ বিলিয়ন(২০ হাজার) অনুচক্রিকা উৎপন্ন হয়। এগুলোর আয়ুষ্কাল ৮-১২দিন। এগুলোর ধ্বংস প্রাপ্তি ঘটে যকৃত ও প্লীহার ম্যাক্রোফেজের মাধ্যমে।
▶ অণুচক্রিকার (Platelets) কাজঃ
১. অস্থায়ী Platelet plug সৃষ্টির মাধ্যমে রক্তপাত বন্ধ করে।
২. রক্তজমাট ত্বরান্বিত করতে বিভিন্ন ক্লটিং ফ্যাক্টর ক্ষরণ করে।
৩. প্রয়োজন শেষে রক্তজমাট বিগলনে সাহায্য করে।
৪. ফ্যাগোসাইটোসিস প্রক্রিয়ায় ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাস ধ্বংস করে।
৫. দেহের কোথাও ব্যথার সৃষ্টি হলে নিউট্রোফিল ও মনোসাইটকে আকুষ্চকরতে রাসায়নিক পদার্থ ক্ষরণ করে।
৬. রক্তবাহিকার এন্ডোথেলিয়ামের অন্তঃপ্রাচীর সুরক্ষার জন্য গ্রোথ-ফ্যাক্টর ক্ষরণ করে।
৭. সেরোটোনিন নামক রাসায়নিক পদার্থ ক্ষরণ করে রক্তপাত বন্ধের উদ্দেশে রক্তবাহিকাকে দ্রুত সংকোচনে উদ্বুদ্ধ করে।
৮. স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক বেশি অণুচক্রিকা থাকলে রক্তনালির ভিতরে অদরকারী রক্তজমাট সৃষ্টি, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনাকে বাড়িয়ে দেয়।
সম্পূর্ণ পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ
AS Tushar