টেস্ট কিট হলো কান পরিষ্কারের কটন বাডের মতো একটা জিনিস আছে যার নাম ’সোয়াব’। আর আছে লেবেল আঁটা একটা ছোট শিশি (ভায়াল), হয়তো একটা জিপলক ব্যাগ।
যার টেস্ট করাতে হবেঃ
প্রথমে সোয়াবটা তার নাকের ভেতর দিয়ে গলা পর্যন্ত ঢুকিয়ে সেখান থেকে ভাইরাসের নমুনা সংগ্রহ করতে হয়। গলার এই অংশটার নাম ন্যাসোফ্যারিংক্স, সেই জন্য এই সোয়াবটিকে বলা হয় ন্যাসোফ্যারিঞ্জিয়াল সোয়াব।
সোয়াবটি ঢুকিয়ে ঘুরিয়ে ঘারিয়ে ন্যাসোফ্যারিংক্সের নমূনা সংগ্রহ হয়ে গেলে সোয়াবটি ভায়ালে ঢুকিয়ে রোগির সনাক্তকরণ আইডি লেবেলে লিখে ব্যাগে ভরে ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখা হয়।
৭২ ঘন্টার মধ্যে এই সোয়াবটি কোন একটি ল্যাবে পরীক্ষা শেষ করতে হবে।
যদি ৭২ ঘন্টায় সোয়াবটি ল্যাবে পৌঁছানো সম্ভব না হয় বা ল্যাবে পৌঁছার পরও দীর্ঘ জটের কারণে পরীক্ষায় দেরী হবার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সোয়াবটিকে শুরুতেই -৭০ (মাইনাস) ডিগ্রী তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হবে।
শিশুদের ক্ষেত্রে শুধু নাক থেকে এবং বৃদ্ধদের ক্ষেত্রে সর্দি সংগ্রহ করলেও কাজ হবে বলে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে।
এর পরের কাজটাই হলো আসলে করোনাভাইরাসের টেস্টিং। এটি করার জন্যঃ
ল্যাবরেটরীতে একটি পিসিআর (পলিমারেজ চেইন রিঅ্যাকশান) যন্ত্র লাগবে।
প্রথমে সোয়াবটির স্যাম্পল থেকে একটি জলীয় দ্রবণ বানানো হয়। এই স্যাম্পলে যদি ভাইরাস থাকে তা জলীয় দ্রবনেও আসবে।
বিশেষ প্রক্রিয়ায় পলিমারেজ এনজাইমের সাহায্যে পিসিআর যন্ত্রে একটি ভাইরাসের আরএনএ থেকে অসংখ্যা আরএনএ তৈরী করা হয়, প্রক্রিয়াটির নাম অ্যাম্পলিফিকেশান – অনেকটা ফটোকপি করার মতো ব্যাপার। অসংখ্য কপি তৈরী হবার ফলে আরএনএ-টিকে পরীক্ষা করা সম্ভব হয়।
আরএনএ-র বৈশিষ্ট্য থেকেই নিশ্চিত হওয়া যায় এটি করোনাভাইরাসের আরএনএ, নাকি অন্য কিছু।
অল্প কথায় এটিই হলো করোনার টেস্ট।
সকালে স্যাম্পল ল্যাবে পৌছালে বিকেলের মধ্যেই জানা যেতে পারে রেজাল্ট
পরীক্ষা কতটা নির্ভরযোগ্যঃ
বিবিসির স্বাস্থ্যবিষয়ক সংবাদদাতা রেচেল স্ক্রেরিয়ার বলছেন, হাসপাতালগুলোতে যেসব পরীক্ষা চালানো হচ্ছে, সেগুলো খুবই নির্ভরযোগ্য। তবে এর মানে এই নয় যে, এই পরীক্ষা থেকে করোনাভাইরাসের প্রত্যেকটি কেস ধরা পড়বে। কোনো রোগীর যদি সংক্রমণ ঘটার একেবারে গোড়ার দিকে নেয়া হয়ে থাকে, অথবা যদি
কারও সংক্রমণের মাত্রা খুব কম থাকে, তা হলে তার পরীক্ষার ফল 'নেগেটিভ' আসতে পারে।
এ ছাড়া গলার ভেতর থেকে নমুনা নেয়ার সময় যদি ওই লালায় যথেষ্ট পরিমাণ ভাইরাস না থাকে, তা হলেও পরীক্ষার ফল 'নেগেটিভ' আসতে পারে। এখনও পর্যন্ত অ্যান্টিবডি পরীক্ষাকে খুব নির্ভরযোগ্য বলে মনে করা হচ্ছে না।
এ বিষয়ে ব্রিটেনের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক বলেন, অ্যান্টিবডি পরীক্ষার সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য যে পরীক্ষাগুলো আছে, তার মধ্যে ১৫টি পরীক্ষা করে দেখা হয়েছে। কিন্তু এর কোনোটাই তারা খুব নির্ভরযোগ্য মনে করছেন না।
অধ্যাপক জন নিউটন ব্রিটেনে এই ভাইরাসটির পরীক্ষার বিষয়টি সার্বিকভাবে তত্ত্বাবধান করছেন। তিনি দ্য টাইমস সংবাদপত্রকে বলেন, চীন থেকে যে অ্যান্টিবডি পরীক্ষার কিটগুলো
এখন প্রশ্ন হলো যে কেউ, যে কোন ল্যাব কি এই কাজটি করতে পারবে?
উত্তর: না। এর জন্য যথেষ্ঠ প্রশিক্ষিত ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন মেডিকেল টেকনোলজিস্ট অবশ্যই লাগবে। প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতাহীন মানুষের কাছে সব আরএনএ-ই দেখতে একই লাগবে। অনেকটা আপনাকে এক্স-রে বা আল্ট্রাসনোগ্রামের সামনে বসিয়ে দিলে আপনি যেমন বুঝতে পারবেন না কোনটা কী জিনিস, এর জন্য প্রশিক্ষিত রেডিওলজিস্ট ও মেডিক্যাল ইমেজিং স্পেশালিস্ট লাগবে।