মহিলাদের জননতন্ত্র বা রিপ্রোডাক্টিভ সিস্টেমে কোনও সমস্যা হলে কনসিভ করা খুব জটিল হয়ে পড়ে। যেমন,
পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোম (পি সি ও এস)- ওভারির মধ্যে অসংখ্য ছোট ছোট সিস্ট বা থলি হয়ে এই সমস্যা হয়। হরমোনের জটিল অসাম্য বা ইমব্যালেন্সের কারণে ঠিকভাবে ম্যাচিওরড না হওয়া এগ ফলিকলের মধ্যে অবস্থান করে। এমন অনেক জমে যাওয়া ফলিকলকেই সিস্ট মনে হয়। এর ফলে, ওভ্যুলেশনের ব্যাঘাত ঘটে এবং ফার্টিলিটির ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হয়। পাশ্চাত্য দুনিয়ায় ৫% থেকে ১১% নারী পি সি ও এস-এর শিকার।
রোগের উপসর্গ:
তেলতেলে ত্বক
অনিয়মিত পিরিয়ড বা পিরিয়ড না হওয়া
শরীরে ও মুখে অবাঞ্ছিত লোম বেড়ে যাওয়া
ওজন বেড়ে যাওয়া (এবং ওজন কমানোর ক্ষেত্রে সমস্যা হওয়া)
প্রেগনেন্ট হতে সমস্যা
বারে বারে মিসক্যারেজ বা গর্ভপাত।
যদি আপনার মা/বোনের PCOS থাকে, তা হলে বংশগত ভাবে আপনার এ রোগ হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তা ছাড়া স্থুলকায়া বা ওভারওয়েট মহিলাদের এই রোগের ঝুঁকি বেশি।
যদি PCOS রোগে ভোগেন, তা হলে হরমোন ভারসাম্য ফিরিয়ে আনতে ও ভ্যুলেশনের উন্নতি ঘটাতে হরমোন চিকিৎত্সা করাতে হতে পারে। বেশি ওজনের হলে ওজন কমিয়ে নিজে নিজেই নিজের অবস্থার উন্নতি করতে পারেন। এমনকী মাত্র ১০% ওজন কমিয়ে হরমোন ভারসাম্য ফিরিয়ে এনে ফার্টিলিটি পুনরুদ্ধার করা যায়। ধীরে ধীরে ওজন কমানোর লক্ষ্যে প্রচুর জটিল কার্বোহাইড্রেট অথচ কম জি আই (গ্লাইসিমিক ইনডেক্স) যুক্ত খাদ্যাভ্যাস করা যেতে পারে। এর ফলে ব্লাড সুগার লেভেল কমে গিয়ে ইনসুলিন উত্পাদনকে সঠিক মাত্রায় নিয়ে যাবে। চাপমুক্ত থাকার বা স্ট্রেস রিলিভিং কিছু পদ্ধতি, যেমন, যোগব্যায়াম ও প্রাণায়াম ফার্টিলিটি বাড়ায়।
এন্ডোমেট্রিওসিস- এটি অত্যন্ত জটিল শারীরিক অবস্থা। এই ক্ষেত্রে জরায়ু বা ইউটেরাসের ভেতরের পর্দা বা এন্ডোমেট্রিয়াল টিস্যু পেলভিক অঞ্চলের অন্যান্য অংশে (যেমন, ওভারি, ফ্যালোপিয়ান টিউব অথবা ব্লাডার) স্থানান্তরিত হয়। টিস্যুগুলি হরমোন পরিবর্তনে সাড়া দিয়ে পিরিয়ডের সময় একই ধরনের রক্তক্ষরণ ঘটায়। এদের থেকে কালক্রমে ক্ষত ও অ্যাডহেশন হয়। কনসিভ না করার কারণগুলির মধ্যে এন্ডোমেট্রিওসিস অন্যতম।
রোগের উপসর্গ:
মাসিকের আগে বা মাসিক চলাকালীন তলপেটে ব্যথা
দীর্ঘকালীন বেশি পিরিয়ড
যৌনমিলন কালে বেদনা
রক্ত সম্পর্কিত কারও এই ধরনের সমস্যা থাকলে, এই রোগ হওয়ার ঝুঁকি থাকে। মাইল্ড বা মৃদু পর্যায়ের এন্ডোমেট্রিওসিস হলে অল্প চিকিত্সায় প্রেগনেন্সি সম্ভব। তবে মডারেট বা মাঝারি এবং সিভিয়ার বা গুরুতj আকারের এন্ডোমেট্রিওসিসে কনসিভিং-এর সম্ভাবনা বাড়াতে চিকিত্সা (সার্জারিরও প্রয়োজন হতে পারে) দরকার। অনেকেরই প্রেগনেন্সি আনার জন্য অ্যাসিস্টেড কনসেপশন বা আই ভি এফ লাগে। খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনলে কিছু উপসর্গ ও অবস্থার তীব্রতা কমতে পারে।
ফাইব্রয়েডস- ইউটেরাসের ভেতরে, দেওয়ালে বা বাইরে এই ধরনের বিনাইন (ক্যান্সার ঘটায় না এমন) টিউমার দেখা যায়। ২০% থেকে ৫০% ক্ষেত্রে ৩৫ থেকে ৫০ বছর বয়সী মহিলাদের এই রোগ খুব বেশি হয় এবং বহু ক্ষেত্রে এরা প্রেগনেন্ট হওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেয় না। প্রায়শই ফাইব্রয়েডে কোনও রকম উপসর্গ থাকে না, যদিও কিছু কিছু মহিলা যন্ত্রণা, বেশি ও অনিয়মিত ব্লিডিং এবং মেনস্ট্রুয়াল ক্র্যাম্পের সমস্যায় ভোগে থাকেন।
ফাইব্রেয়ড যদি ইউটেরাসের বাইরে হয় তাহলে ওভ্যুলেশনের পরে এগ যখন ফ্যালোপিয়ান টিউবে প্রবেশ করে তখন বাধা পায়। এতে ফার্টিলিটিতে অসুবিধে ঘটে। তাছাড়া এরা ইউটেরাসের দেওয়াল বরাবর বড় হয়ে ভেতরের পর্দায় চাপ দিয়ে বারবার ভ্রূণ বা এমব্রায়োর ইমপ্লান্টেশন হওয়ার ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করে। ইউটেরাসের ঘরের মধ্যে থেকে ছোট ফাইব্রয়েডও একই সমস্যা করে। অন্য দিকে বড় আকারের ফাইব্রয়েডস (৪-৫ সেমি/১.৫-২ ইঞ্চি ব্যাস যুক্ত) প্রেগনেন্সির শেষের দিকে গর্ভের শিশুকে জায়গা না দিয়ে সমস্যা ঘটায়।
অস্ত্রোপচার-সহ সনাতন বা কনভেনশনাল কিছু ওষুধের সাহায্যে ফাইব্রয়েডের চিকিত্সা করা হয়। ফাইব্রয়েডস ইষ্ট্রোজেন সংবেদনশীল বা ইষ্ট্রোজেন-সেন্সিটিভ হওয়ায় লো-ফ্যাট বা হাই ফাইবার সমৃদ্ধ খাদ্যে কাজ হয়। ফ্যাট সেল ইষ্ট্রোজেন উত্পাদনে উদ্দীপনা জোগায়, তাই কম পরিমাণ ফ্যাট খেলে এই হরমোনের মাত্রাও কমে যায়।