চিকিৎসার পরিভাষায় রক্তে oxygen কমে যাওয়াকে বলা হয়, hypoxia। শুধু কোভিড-১৯ নয়, অন্যান্য অসুখেও hypoxia হতে পারে। এটি কোনও রোগ নয়, উপসর্গ। তবে এই উপসর্গ এতটাই সিরিয়াস যে, দ্রুত চিকিৎসা শুরু না করলে রোগীর মস্তিষ্কে বড় ধরনের ক্ষতি হওয়ার প্রভাব পেলতে পারে।
করোনা-ভাইরাসের সংক্রমণ যত বেড়েছে, ঘরে ঘরে অক্সিমিটার রাখার প্রবণতাও তত বেড়েছে। কোভিড-১৯ এর অন্যতম উপসর্গ যেহেতু শরীরে oxygen এর পরিমাণ কমে যাওয়া, তাই সাধারণ মানুষ সচেতন হয়েছেন।
Hypoxia কাদের সম্ভাবনা বেশিঃ
একজন সুস্থ মানুষের শরীরে ৯০-১০০ শতাংশ oxygen এর মাত্রা থাকা উচিত। সেটা কম হয়ে গেলেই সমস্যা হবে। ক্রনিক অসুখের কারণে কারও hypoxia হতে পারে, আবার আচমকাই কারও মধ্যে এর প্রভাব দেখা যেতে পারে।
সিওপিডি (ক্রনিক অবস্ট্রাক্টিভ পালমোনারি ডিজ়িজ়), অ্যাজমার রোগীদের ক্ষেত্রে hypoxia দেখা যায় বেশি। কারণ এঁদের শরীরে এমনিই oxygen কম জেনারেটেড হয়। তাই কোনও কারণে যদি রোগের প্রকোপ বাড়ে তখন শরীরে oxygen এর মাত্রা দ্রুত কমে যায়। সে ক্ষেত্রে যদি দেখা যায়, oxygen এর লেভেল ৯০-এর নীচে নেমে গিয়েছে, তখন দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা উচিত।
অ্যানিমিয়ার রোগীদের মধ্যেও এই উপসর্গ দেখা যায়। আমাদের শরীরে রক্তের মধ্যে হিমোগ্লোবিন oxygen বহন করে। অ্যানিমিয়ার রোগীদের শরীরে এমনিতেই অক্সিজেনের মাত্রা কম থাকে। যে কারণে এঁদের নিয়মিত ব্লাড টেস্ট করানো গেলে ভাল। রক্তে হিমোগ্লোবিন খুব কমে গেলে, আগাম ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হবে।
এ ছাড়া দমবন্ধ করা জায়গায় থাকার ফলেও Hypoxia হতে পারে। কোভিড বিপর্যস্ত এ সময়ে ভিড়ভাট্টায় এই সমস্যা বাড়তে পারে বলে মত চিকিৎসকদের।
কারও হার্টে ব্লকেজ থাকলে উপসর্গ হিসেবে hypoxia দেখা যেতে পারে। তখন রোগীর বুকে ব্যথা হবে।
দুর্ঘটনাজনিত কারণেও এটি হতে পারে। যেমন, শ্বাসনালিতে কোনও খাবার আটকে গিয়ে hypoxia সম্ভাবনা রয়েছে।
নিয়মিত মনিটর করা জরুরিঃ
Hypoxia কারণেই করোনা রোগীর ক্ষেত্রে নিয়মিত oxygen লেভেল মনিটর করা হচ্ছে এবং সেই মাত্রা ৯০-এর নীচে নেমে গেলে হাসপাতালে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা।
অধিকাংশ কোভিড-১৯ এর রোগীর কমন উপসর্গ শ্বাসকষ্ট। এই রোগে ভাইরাসটি ফুসফুসে ঢুকে অ্যালভিওলাই ও ফুসফুসের থলিগুলির ক্ষতি করে। যে কারণে শরীরে oxygen সরবরাহ করার কাজটা কঠিন হয়ে পড়ে। অক্সিজেনের ঘাটতি যদি বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে যায়, তা মাথায় আঘাত পর্যন্ত করতে পারে। তাই আমাদের কে সচেতনাতা অবলম্বন করতে হবে।
প্রতিকারের উপায়
পরিস্থিতি এখন শাঁখের করাতের মতো। স্বাভাবিক নিয়মে রাস্তায় বেরোলে বা ভিড়ের মধ্যে গেলে মাস্ক পরা আবশ্যিক। কিন্তু ভিড় জায়গা মানে সেখানে oxygen কম এবং কার্বন ডাইঅক্সাইডের মাত্রা বেশি। সে ক্ষেত্রে মাস্ক পরে থাকলে শ্বাসকষ্ট হবেই।
শরীরে oxygen এর মাত্রা কমে গিয়ে কারও বুকে ব্যথা হতে পারে, কেউ অজ্ঞান হয়ে যেতে পারেন। এ ক্ষেত্রে চিকিৎসকেরা ভিড় এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন। ভিড়ের মধ্যে মাস্ক পরে থাকলে শরীরে oxygen সরবরাহ কম হবে। Hypoxia ফলে কারও ব্রেন ড্যামেজ হওয়ার সম্ভাবনাও কিন্তু যথেষ্ট। এই উভয় সংকট তখনই এড়ানো যাবে, যখন মানুষ জন ভিড়ের মধ্যে যাবেন না।
যাঁরা নিজেরা গাড়ি চালান, তাঁদের গাড়ির মধ্যে সারাক্ষণ মাস্ক না পরে থাকলেও চলবে বলছেন অনেক বিশেষজ্ঞই। তবে বাইরের কোনও ব্যক্তি থাকলে মাস্ক পরা উচিত হবে বলে মনে করেন।
মর্নিং ওয়াক এবং শারীরচর্চার সময়েও মাস্ক পরতে নিষেধ করছেন চিকিৎসকেরা। এতেও শরীরে oxygen এর মাত্রা কমে গিয়ে অজ্ঞান হয়ে পড়ার সমূহ সম্ভাবনা থাকে।
এখন জিম খুলে গিয়েছে, অনেকে যাচ্ছেনও। কিন্তু কার্ডিয়ো, ওয়েট ট্রেনিং, এরোবিক্স বা অন্য এক্সারসাইজ় করার সময়ে মাস্ক না পরার নিদান চিকিৎসকদের। সে ক্ষেত্রে অন্যদের থেকে শারীরিক দূরত্ব বজায় রাখাটাই একমাত্র উপায় বলে মনে করেন চিকিৎসকেরা।