হাজারো রক্তদাতাদের আদর্শ ও বাংলাদেশের ২য় সর্বোচ্চ রক্তদাতা রহিম স্যারের রক্তদান জগতের পথচলা
নামঃ জনাব মোহাম্মদ আব্দুর রহিম
পিতাঃ স্বর্গীয় জনাব মোহাম্মদ আব্দুল করিম
মাতাঃ স্বর্গীয় জনাবা আহিদা বেগম
জন্মঃ ১৯৭৩ সালের ১লা জানুয়ারি
জেলাঃ নোয়াখালী
উপজেলাঃ হাতিয়ার হরণী
বাড়িঃ আলী আহমদ ডাক্তার
সময়টা ছিলো ১৯৮২ সাল। মেঘনা নদীর ভাঙ্গনে নিজ ঘর বাড়ি হারান। মা,বাবা,ভাই ও বোনকে নিয়ে উঠেন সূবর্ণচর উপজেলার পশ্চিমচর জুবিলী গ্রামে। তখন তার বয়স ছিল ১০বছর আর তিনি তখন পড়তেন ৪র্থ শ্রেনীতে। তখন দেশের আর্থিক অবস্থা ছিল খুবোই খারাপ। অনেক দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থী পড়ালেখা বন্ধ করে দিয়েছে বই কিনতে না পেরে। তখন তিনি ঠিক করেছে পুরাতন বই সংগ্রহ করে নতুনদের পড়তে দিবেন। এতো ছোট বয়সে তিনি শিক্ষার্থীদের বাড়িতে গিয়ে পুরাতন বই গুলো সংগ্রহ করে দরিদ্র শিক্ষার্থীদের মাঝে বিতরণ করেন। এইভাবেই শুরু হলো তার মানবসেবা। তিনি ১৯৮৮ সালে শহীদ জয়লান আবেদীন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এস এস সি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হউন। ছোটবেলায় এক দূর্যোগে বাড়ি ঘর হারান।বিদ্যালয় ছাড়ার পূর্বে তার সমবয়সী ও তার থেকে ছোট শিক্ষার্থীদের নিয়ে একটি ক্লাব তৈরী করেন আর সেই ক্লাবের নাম দেন তুর্য্য ক্লাব। এই ক্লাবটির প্রধান এবং মুল উদ্দেশ্য হচ্ছে পুরাতন বই সংগ্রহ করে নতুন দরিদ্র মেধাবী শিক্ষার্থীদের মাঝে তা বিতরণ করা।
তারপর ১৯৮৮ সালে তিনি একটি চক্ষু শিবির অনুষ্ঠানের স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন । তখন তিনি নোয়াখালী সরকারি কলেজে ভর্তি হয়েছিলেন। ভলেন্টারি করার সময় হত দরিদ্র মানুষদের চিকিৎসার বিষয়টি তাকে ভাবায়। তখন তার আর্থিক অবস্তা ভালো ছিল না যার কারণে তিনি চাইলেও বেশী কিছু করতে পারেন নাই। তখন কার সময় রক্ত বিনামূল্যে পাওয়া যেতো নাহ। তাই তিনি ঠিক করলেন তিনি বিনামূল্যে স্বেচ্ছায় রক্তদান করবে। ১৯৮৯ সালের শেষের দিক থেকে শুরু করলেন বিনামুল্যে রক্তদান। আর এই ভাবে শুরু হয় তার রক্তদান জগতের পথচলা।
১৯৯০ সালে তিনি ভর্তি হন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। তখন অবশ্য তিনি সন্ধানী এর সাথে সংযুক্ত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময়ে তিনি তার সহপাঠিদের সাথে কথা বলে তাদেরকে রক্তদানের উৎসাহিত করেন। শুরুতে বিষয়টা অনেক কষ্টের ছিল। কারণ তখন রক্তদান নিয়ে মানুষদের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা ছিল। কিন্তু তারপরেও তিনি থেমে থাকেন নি। তিনি তার মতো করে চেষ্টা চালিয়ে যান। কিছুটা সফল হলেও বর্তমানে প্রযুক্তির ফলে কাজটি আরো সহজতর হয়ে পড়ে।
তারপরা ১৯৯৯ সালে তিনি দাগনভূঞার সরকারী ইকবাল মেমোরিয়াল ডিগ্রী কলেজে দর্শন বিভাগের শিক্ষক হিসেবে তিনি যোগদান করেন।
তারপর থেকে তিনি তার শিক্ষার্থীদেরকে রক্তদান সম্পর্কে সচেতন করেন এবং তাদের দিয়ে রক্তদান করান।
তার সাথে কথা বলে জানা যায় তিনি তার ৪০০+ ছাত্র/ছাত্রীদের নাম,রক্তের গ্রুপ ও মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করে রেখেছেন। যেকোনও মুহূর্ত রক্তের প্রয়োজনে তিনি তাদেরকে ফোন করলে তারা যথা স্থানে গিয়ে রক্তদান করে আসেন। আর এদেরকে রক্তদানে উদ্বুদ্ধ করেছিলেন তিনি।
অনেক সংগঠনের উপদেষ্টা তিনি। তাছাড়াও তিনি বর্তমানে একটি গ্রুপ পরিচালনা করতেছেন। গ্রুপটির নাম ব্লাড ফর হিউমানিটি। সেখানে তিনি রক্তদাতাদের পরিচিতি পোস্ট করে রাখে যাতে করে রোগীদের রক্তের প্রয়োজনে তারা সেখান থেকে রক্তদাতা খুঁজে পান।
তিনি তার মাসিক বেতন থেকে টাকা দিয়ে এবং তার বন্ধুদের থেকে টাকা নিয়ে অসহায় মানুষদের বিভিন্ন ভাবে সহযোগিতা করে আসছে।
তার সাথে কথা বলার সময় এক পর্যায়ে তিনি বলেন যে,
"এতোদিন নিঃস্বার্থে মানুষের সেবা করে এসেছি,
বর্তমানেও করছি ও আগামীতেও করে যাবো।"
সত্যি রহিম সারের বিষয়ে যতই লিখি তা কম পড়ে যাবে। আকাষের মতো বিষাল তার হৃদয়। এককথায় বলতে গেলে তিনি একজন সুপার হিরো।