রক্ত!!
কেনা যায় কি কখনো?
কল্পনা করুন তো, আপনার মা-বাবা বা আপনজনের ইমারজেন্সি রক্ত লাগবে কিন্তু ডোনার পাচ্ছেন না। অনেক কষ্টে যখন পেলেন সে হয়তো কৌশলে নিজেকে পাশ কাটিয়ে নিল নানা অজুহাতে। অথবা স্ট্রেইট বলে দিল আমি রক্ত দেব না। তখন আপনি কতটা অসহায় একজন মানুষ যে অনেক অর্থের বিনিময়েও স্বজনের জন্য রক্ত ম্যানেজ করতে পারছেন না।
সেদিন রাতে অফিস থেকে ফিরতে হঠাৎ এক পশলা বৃষ্টিতে ভিজে খানিকটা জ্বর ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছিল। পরদিন সকালে জ্বর গেলেও কিছুটা ম্যাজম্যাজে ভাব নিয়েই অফিস যাচ্ছিলাম। কাছাকাছি যেতেই সহকর্মী কল দিয়ে বলল, আপনার ব্লাড গ্রুপ কী? এ পজিটিভ শুনে অমনি অস্থির মুডে বলে, আচ্ছা তাড়াতাড়ি আসেন আপনাকে নিয়ে হাসপাতালে যাব। আমার আম্মার খুব ইমারজেন্সি এক ব্যাগ ব্লাড লাগবে।
সাথে সাথেই বুকটা একটু ধপ করে উঠল। ইনজেকশনের সুইতো আমি বরাবরই ভয় পাই আর শরীরটাও ফিট না। আগে বেশ কয়েকবার ব্লাড দেওয়ার প্রস্তুতি থাকলেও ফাইনালি দেওয়া লাগে নি। মনে মনে ভাবলাম, আজ বুঝি না দিয়ে রেহাই নেই।
কখনও ব্লাড না দিলেও রোগীর স্বজনেরা যখন ডোনার খোঁজে তখন তাদের মনের অবস্থা কেমন হয় সেটা ঠিকই উপলব্ধি করতে পারি। ভাইয়ের অসহায় কণ্ঠস্বরও ঠিক তেমনই ছিল। পরদিন আবার করোনা ভ্যাক্সিন নেওয়ার ডেট, অনেক অপেক্ষার পর ম্যাসেজ এসেছে। হাসপাতাল যাবার পথে তিনি বললেন, আমার মায়ের জন্য আপনার রক্ত ভাগ্যে আছে বলেই ম্যাসেজ পরে এসেছে। আরেকদিন বাদে হলেই আপনার ব্লাড নেওয়া হত না।
এমনি আরও আলাপচারিতায় মানসিক শক্তি কিছু পাচ্ছিলাম বটেই তবুও ছেলেমানুষের মত শেষ চেষ্টা কম করিনি। এ পজিটিভ ব্লাডের অনেক বন্ধুদের কল দিয়েই যাচ্ছিলাম কিন্তু কেও এত স্বল্পসময়ে এসে ব্লাড ডোনেট করতে পারবে না।
হাসপাতালের বেডে শুয়ে যেখানে নার্ভাস বা ভীতু থাকব ভেবেছিলাম, সেখানে উল্টো একটা আত্মিক শান্তি পাচ্ছিলাম আর বলছিলাম, আল্লাহ তুমি অ্যান্টিকে সুস্থ করে দেও। আমার দেয়া প্রথম ব্লাড যেন বিফলে না যায়।
এরপর কোনরকম ঝামেলা ছাড়াই বেশ সাবলীল ভাবেই অফিস ফিরলাম। কাজ করতে করতে হঠাৎ গ্রুপ ম্যাসেঞ্জারে স্যারের ম্যাসেজ পাই; আমাকে মেনশন করে লিখলেন রক্ত দেওয়ায় আমাকে কলিজার তরকারি খাওয়াবেন।
তখনকার সেই উষ্ণ অনুভূতি ভাষায় প্রকাশ করা কঠিন। বিস্ময়ের সাথে ভাবলাম, কতই না মহৎ একটি কাজ করেছি! আর আপসোসও হল, এতদিন আরও অনেকবার হয়তো এমন মহৎ কাজের সাক্ষী হতে পারতাম!
মানুষের রক্ত-অমুল্য এক সম্পদ, যা দাম দিয়ে কেনা যায় না। এ এমন এক দান যা না পেলে মানুষ মারা যাবে কিন্তু টাকা দিয়ে রক্ত তৈরি করার সামর্থ্য এখনও বিজ্ঞানের হয়নি।
প্রিয় শুভানুধ্যায়ী বন্ধুরা, আপনারা কী রক্ত দান করেন? না করলে শুরু করুন - এটা আপনার আখিরাতের পাথেয় হয়ে থাকবে ইনশা আল্লাহ।
আর যারা নিয়মিত রক্ত দেন, আপনার প্রথম রক্তদানের অনুভূতি বা অভিজ্ঞতা কেমন ছিল তা কমেন্টে আমাদের সাথে শেয়ার করতে পারেন।
#জনস্বার্থে_ওয়ান_উম্মাহ_বিডি